শফিউল আযম, বেড়া ঃপাবনার সাঁথিয়া একটি চিহিৃত প্রতারকচক্র জাল কাগজপত্র তৈরি করে পৌর এলাকার ‘খ’ তফসিল ভুক্ত প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের ৫৯ শতাংশ জমি হাতবদল করেছে। এই ৫৯ শতাংশ জমি মধ্যে ২৫ শতাংশ বিক্রি এবং অবশিষ্ঠ ৩৪ শতাংশ জমি অপ্রত্যাহার যোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি জনৈক ফরহাদ হোসেন এর নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই প্রতারকচক্রের সদস্যরা হলেন, সুজানগর পৌরসভার ভবাণীপুর গ্রামের মৃত তারাপদ হালদারের ছেলে রবীন্দ্রনাথ হালদার ও সাঁথিয়া পৌরসভার দৌলতপুর গ্রামের তায়জাল হোসেন খাঁন এর ছেলে এ টি হক লিমিটেডের পাবনা জেলা সেলস্ ম্যানেজার ফরহাদ হোসেন।
জানা যায়, সাঁথিয়া পৌরসভা এলাকার দৌলতপুর গ্রামের মোবারক আলী খাঁন এর ছেলে লাল হোসেন খাঁন ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান সরকার হতে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে দৌলতপুর মৌজার ৫৯ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে ভোগ দখলে ছিল। যার জে এল নং ১১৩, দাগ নং ৫৫৯/৫৬৪, খতিয়ান নং ০২/২৩১। খাজনা পরিষোধ না করার কারণে ওই জমি ‘খ’ তফসিল ভুক্ত করা হয়। এদিকে লাল হোসেন খাঁন এর মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণ সম্পত্তি বিক্রয় করে দেন। বর্তমানে ওই জমিতে ক্রয় সূত্রে ১৯টি পরিবার বিল্ডিং, আধাপাঁকা, কাঁচাঘর ও বাগান বাড়ি করে ভোগ দখল করে আসছে। এছাড়া জমিটির স্বত্ববান হওয়ার জন্য পাবনার যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
প্রতারক চক্রের প্রধান রবীন্দ্রনাথ হালদারকে দৌলতপুর গ্রামসহ আশে পাশের কেউ চিনেন না। প্রায় ৬০ বছর পর রবীন্দ্রনাথ হালদার ওই জমি তার নানার দাবী করে ওয়ারিশানের ভূয়া কাগজ পত্র তৈরি করেন। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন ফরহাদ হোসেন। রবীন্দ্রনাথ হালদার ২ ভাই ১ বোন হওয়া স্বত্বেও ওয়ারিশান সার্টিফিকেটে গোপন করে পিতার একমাত্র সন্তান দাবী করে ভূয়া ওয়ারিশ সেজে, সাঁথিয়া পৌরসভা মেয়র এর স্বাক্ষর জালসহ পৌরসভার ভূয়া স্মারক-তারিখ বসিয়ে ওয়ারিশান সনদ তৈরি করেন। যা দিয়ে পরবর্তিতে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে ‘খ’ তফসিল হতে জমি অবমুক্ত করে নামজারী সহ খাজনা-খারিজ সম্পন্ন করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে এবং বর্তমান বসবাসকারীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) তদন্তে ওয়ারিশান সনদ জাল ও ভূয়া প্রমানীত হওয়ায় নামজারী বাতিল করে ওই জমি পূর্বের মূল খতিয়ান ‘খ’ তফসিলে ফেরত পাঠান। রায়ের কপি জ্ঞাতার্থে ও কার্যার্থে সাব-রেজিষ্ট্রার সাঁথিয়া, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বাদী ও বিবাদীকে প্রেরেণ করেন।
এ রায়ের দুই সপ্তাহের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ হালদার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাঁথিয়া, পাবনার অফিস আদেশ অমান্য করে চক্রের অপর সদস্য ফরহাদ হোসেন এর কাছে সাঁথিয়া সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে ‘খ’ তফশিল ভুক্ত¬ ৫৯ শতাংশ জমির মধ্য হতে ২৫ শতাংশ জমি কবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন। যার নং ৬৬৮৫, তারিখ: ১১/১১/২০২৪ইং। অবশিষ্ঠ ৩৪ শতাংশ জমি আপ্রত্যহার যোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল রেজিষ্ট্রারী করে দেন। যার দলিল নং ৬৬৮৬, তারিখ: ১১/১১/২০২৪ ইং।
এই জমিতে বসবাসকারী অবসর প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন মল্লিক বলেন, আমার বয়স ৭৫ বসর। এখানেই আমার জন্ম ও বড় হয়েছি। এ পর্যন্ত কোন দিন শুনিনি বা দেখিনি শিবেন্দ্র নাথের কেউ দেশে আছে। হঠাৎ সুজনগর ঊপজেলার রবিন্দ্রনাথ হলাদার এতো বছর পর এসে দাবি করছে এই সম্পত্তি তার নানার। এই প্রতারক চক্র এভাবেই ভিপি ও খাস জমি জাল কাগজ পত্র তৈরি করে জমি হাতিয়ে নেয়।
মোবাইল ফোনে রবীন্দ্রনাথের কাছে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে “খ” তফশিলভূক্ত সম্পত্তি বিক্রি ও অফেরযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটোর্নি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন “এ ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলে আমার কোন লাভ নেই ”।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া’র সাব-রেজিষ্ট্রার কামরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভূমি অফিসের খাজনা খারিজ দেখেই রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। তবে এ খাজনা খারিজ ভূয়া কি না এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে চিঠি পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া সুলতানা বলেন, পৌর সভার ওয়ারিশান সার্টিফিকেটের পরিপ্রেক্ষিতে খাজনা খারিজ দেয়া হয়েছিল। পরে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট ভূয়া প্রমাণিত হওয়ায় খাজনা খারিজ বাতিল করে সম্পত্তি মূল খতিয়ানভূক্ত করা হয়। এ ব্যপারে দোষিদেও বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply