সফিক ইসলাম:পাবনা পেয়াজ চাষিদের পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রতি কেজি ৩০ ৪০ টাকার মতো। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ৫০-৬০ টাকা হলেও স্বাভাবিক ও সহনশীল। তাই খুশি পাববনার পেয়াজ চাষিরা।
এবছর পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে লোকসান পরেছে চাষিরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী শেষ থেকেই ব্যাপকহারে বাজারে আসতে শুরু করে চারা বা হালি পেঁয়াজ। সেসময় পেঁয়াজের বাজার প্রতি মণ ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় লোকশান গুনতে চাষিদের। মজুতদারদের তৎপরতায় সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম । আবাও মুখে হাসি ফুটেছে চাষিদের। দাম স্থির রাখতে আমদানি না করার দাবি চাষিদের।
পাবনার পেঁয়াজ আবাদের প্রায় চাষিদের বড় একটি অংশ বিভিন্নভাবে ঋণ গ্রহন করে পেঁয়াজ আবাদে লগ্নি করেন। এবং পেঁয়াজ উঠার শুরুতেই ঋণ পরিশোধের ব্যাপক চাপ থাকে। যার ফলে অনেকেই পিয়াজ উঠতে না উঠতেই এক থেকে দুই মাসের মধ্যে অধিকাংশ পেঁয়াজ বিক্রি করেন। তাছাড়া সংরক্ষণ ব্যাবস্থা না থাকার কারণেও অনেকে বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করেন । আর যাদের সংরক্ষণেরর ব্যবস্থা রয়েছে বা ঋণ পরিশোষের চাপ তারা পেঁয়াজ রেখে দিচ্ছেন ভালো দামের আশায় ।
বেসরকারি সংস্থাসহ ঋণ সার কীটনাশকের দোকানের বাকি এগুলো পরিশোধে জন্য শুরুতেই লোকসানে পেঁয়াজের বড় একটি অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক চাষি। বর্তমানে দামবৃদ্ধিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
শুরু থেকেই এরকম দাম পেলে চাষিদের খরচ উঠতো জানিয়েছেন অনেক কৃষক। তারা বলেন, বিঘায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবার। তারপর ফলনও কম। গড়ে সর্ব্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ মণ করে ফলন হয়েছে। যদিও দেনা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছি।
পাবনার কয়েকটি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ বাড়ায় ভোর থেকেই বেশিরভাগ বাজার বা হাটে পাইকারি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন চাষিরা। মা ১৬০০-২২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ সপ্তাহখানেক আগেও এক ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বাড়ায় এক থেকে দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় বাজার বা হাটগুলোতে এখন পেঁয়াজ বেশি আনছেন চাষিরা।
একজন পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘চৈত্র মাসের শেষের দিক থেকে বৈশাখ মাসে পেঁয়াজ বাঁধাই করা শুরু হয়। পেঁয়াজ ওঠার শুরুতে বাঁধাইকারীরা কেনেন না। সে সময় না কিনলেও এখন তারা মজুদের জন্য বেশি কেনেন। অবশ্য বাজারে পেঁয়াজ আমদানি বর্তমানে কম। এজন্য একটু দাম বেড়েছে। তবে এরকম দাম হলে আমরা অন্তত ঋণটা শোধ করতে পারতাম।’
পাবনা সদর উপজেলার এক পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘এখন বাঁধাইর সময় তাই দাম একটু বেড়েছে। বাজারে যদি আমদানি থাকে তাহলে দাম কমে। বর্তমানে বন্ধ আছে, এছাড়া এখন ব্যাপারী-ব্যবসায়ীরা বাঁধাইয়ের জন্য বেশি কিনছেন। সেক্ষেত্রে দাম বাড়ছে। এতে আমরা খুশি। দাম এরকম থাকলে আমরা লাভবান হবো।’
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় তিন মাস মেহেরপুরের পেঁয়াজের বাজারে ছিল। বর্তমানে মেহেরপুরের পেঁয়াজটা বাজারে নেই। তাছাড়া এখন কিছু মানুষ স্টক করছে। আবার আমদানিও বন্ধ। তাই পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তি। এটা চাষিদের জন্য ভালো।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন জেলায় এবার চারা বা হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এছাড়া উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে সাত লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। তবে চাষিরা বলছেন, এবার ফলন কম পেয়েছেন তারা। কিন্তু আবাদ হয়েছে বেশি।
তিনি আরো বলেন, ভোক্তা অধিকার প্রায় দিন বাজার পিয়াজের বাজার মনিটরিং করছেন। আমাদের কাছে থাকা মাঠপর্যায়ের তথ্যানুযায়ী চাষিদের ঘরে এখনো অনেক পেঁয়াজ রয়েছে। হয়তো ২০-৩০ শতাংশ পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন তারা। পেঁয়াজ সংরক্ষণে আমরা কৃষকদের এয়ার ফ্লো প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ এবং সহযোগীতা দিচ্ছি। বর্তমানে সুজানগরে ৬০, পাবনা সদরে ০৩ ও সাঁথিয়া উপজেলায় ০৫টি এয়ার ফ্লো মেশিন কৃষকরা ব্যবহার করছেন। সরকারিভাবে এর ব্যবহার বাড়াতে আমরা চেষ্টা করছি।
Leave a Reply