প্রায় ছয় মাস আগে অপহরণ করা হয় ছয় বছরের শিশু সোয়াইব হোসেনকে। অপহরণের পর করানো হতো ভিক্ষা। এরপর ও চালানো হতো নির্যাতন। ঘটনার ছয় মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রুপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দিয়ে, হাতের নখ উপড়িয়ে প্রায় প্রতিবন্ধী করে ফেলে শিশু সোয়ােইবের । আর দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা। তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আর করা হয়েছে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে (৩০)।
দীর্ঘ ছয় মাস পরে উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান তার আদরের সন্তান সোয়াইব হোসেনকে চিনতে পারেননি । আদরের সন্তান সোয়াইব ছিল বেশ স্বাস্থ্যবান আর মাথা ছিল চুল। সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার অবস্থা। ছয় বছরের শিশু সোয়াইব বর্তমানে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে বিছানায়।
এলাকায় গিয়ে সরজমিনে জানা গেছে, পাবনা জেলার সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার পিতা আমিনুল ইসলাম ও মাতা সোহানা জাহানের সন্তান সোয়াইব হোসেন (৬)। আমিনুল ইসলাম অন্যত্র বিয়ে করায় এবং আমিনুল ইসলাম সেই স্ত্রীর নিকট থাকায় মায়ের কাছেই থাকে সোয়াইব হোসেন ।২০২৪ সালের ২ অক্টোবর একই উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইব হেসেন কে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
সোহানা জাহান সন্তানের কোথাও খোঁজ না পেয়ে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেন। রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানায় আত্মগোপনে থেকে । তবে কোথায় থেকে ফোন করছে তা সোয়াইবের মা বুঝতে পারতো না কারন বেশিরভাগ সময় তার ফোন বন্ধ থাকতো। সাধারন ডায়রী করার পর ফোন নাম্বার প্রযুক্রির মাধ্যেমে ট্র্যাক করে তার লোকেশন শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। এবং সোয়াইব উদ্ধারে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করাতে মাঠে নামে পুলিশ।ফোন নাম্বার প্রযুক্রির মাধ্যেমে ট্র্যাক করে তার লোকেশন শনাক্তের পর খুলনার রুপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ও শিশুটির ওপর বর্বর নির্যাতনের তথ্য। ভুক্তভোগী শিশু সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখতেন রফিকুল ইসলাম বিপ্লব। সহজে কিছু খেতে দিতেন না। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলতেন। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। বাম হাতের একটি আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাতেন বিপ্লব।
সোয়াইবের মা বলেন, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সেদিন বিপ্লব আমার কাছ থেকে ছেলেটাকে নিয়ে যায় বিস্কুট কিনে দেবে বলে। তারপর থেকে ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। পরে সে ফোন করে জানিয়েছিল যে আমার ছেলেকে সে অপহরণ করেছে। তারপর থেকে তার ফোনও বন্ধ। এরপর সদর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করি।
সোহানা জাহান আরও বলেন, প্রায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে আমার ছেলেকে। কঙ্কাল সার শরীর নিয়ে ছেলেটা নড়াচড়াও করতে পারছে না। আমি অভিযুক্ত বিপ্লবের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ফাঁসি চাই।
পাবনা সদর থানার ওসি (তদন্ত)এ এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও খুলনার রুপসা ফেরিঘাট ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার এবং শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে ১৯ এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে শিশু সোয়াইব হোসাইন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ২৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
Leave a Reply